প্রাণীর শ্বসন (পাঠ ৩)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান শ্বসন | - | NCTB BOOK
495
495

আমরা নাক দিয়ে শ্বাসপ্রশ্বাস গ্রহণ করি। শ্বাসপ্রশ্বাসের সময় আমরা কী গ্যাস গ্রহণ ও ত্যাগ করি? প্রাণী ও উদ্ভিদ বায়ু থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড ত্যাগ করে। তাদের এ প্রক্রিয়া চলতে থাকে সারাজীবন। তবে প্রাণী ও উদ্ভিদের বেলায় গ্যাস গ্রহণ ও বর্জন করার প্রক্রিয়া ভিন্ন প্রকৃতির। উদ্ভিদ পাতায় অবস্থিত স্টোমাটা নামক এক প্রকার ছিদ্রের মাঠ্যমে অক্সিজেন গ্রহণ করে। নিম্ন ও উচ্চশ্রেণির প্রাণীর দেহে গ্যাসের আদান প্রদান ঘটে বিভিন্ন প্রকার অঙ্গের মাধ্যমে। যেমন- ফুলকা, ফুসফুস। যে অঙ্গগুলো শ্বসনকার্য চালানোর কাজে অংশ নেয় তাদের একত্রে শ্বসনতন্ত্র বলে। মানব শ্বসনতন্ত্র নিম্নলিখিত অঙ্গগুলো নিয়ে গঠিত।

১. নাসারন্ধ্র ও নাসাপথ
২. নাসা গলবিল
৩. স্বরযন্ত্র
৪. শ্বাসনালি বা ট্রাকিয়া
৫. ক্লোম শাখা বা ব্রংকাস
৬. ফুসফুস
৭. মধ্যচ্ছদা

১. নাসার ও নাসাপথ: নাসিকা মুখগহ্বরের উপরে অবস্থিত একটি ত্রিকোণাকার গহ্বর। এটি সামনে নাসিকা ছিদ্র হতে পশ্চাতে গলবিল পর্যন্ত বিস্তৃত। একটি পাতলা পর্দা দিয়ে এটি দুইভাগে বিভক্ত হয়েছে। এর সম্মুখভাগ লোম ও পশ্চাৎ দিক ঝিল্লি দ্বারা আবৃত থাকে। আমরা নাক দিয়ে যে বায়ু গ্রহণ করি তাকে প্রশ্বাস বলে। প্রশ্বাস বায়ুতে ধূলিকণা, রোগজীবাণু থাকলে তা এই লোম ও ঝিল্লিতে আটকে যায়।

চিত্র-৪.২: নাসারন্ধ্র ও নাসাপথ

২. নাসা গলবিল: নাসা গলবিল হলো নাসাপথের শেষ অংশ যা গলবিলের সাথে মিশেছে। গলবিল পথে শ্বাসনালিতে বাতাস প্রবেশ করে।

৩. স্বরযন্ত্র: গলবিল ও শ্বাসনালির সংযোগস্থলে স্বরযন্ত্র অবস্থিত। স্বরযন্ত্রে স্বর সৃষ্টিকারী স্বররজ্জু বা ভোকাল কর্ড থাকে। তাই একে স্বরযন্ত্র বলে। স্বরছিদ্রের মুখে একটা ঢাকনা থাকে। এটি খাদ্য গ্রহণের সময় স্বরযন্ত্রকে ঢেকে রাখে, যাতে এতে খাদ্য ঢুকতে না পারে আবার শ্বাস গ্রহণের সময় খুলে যায়।

৪. শ্বাসনালি: খাদ্যনালির সম্মুখে অবস্থিত স্বরযন্ত্র থেকে শুরু হয়ে ক্লোম শাখা পর্যন্ত বিস্তৃত নালিকে শ্বাসনালি বলে। শ্বাসনালির মাধ্যমে বায়ু ফুসফুসে প্রবেশ করে।

৫. ক্লোম শাখা বা ব্রঙ্কাস: শ্বাসনালি ফুসফুসের কাছে এসে ডান ও বাম দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে যথাক্রমে ডান ও বাম ফুসফুসে প্রবেশ করে। এদেরকে ডান ও বাম ক্লোম শাখা বা ব্রঙ্কাই (একবচনে ব্রঙ্কাস) বলে। ফুসফুসে প্রবেশ করার পর এই শাখাদ্বয় অসংখ্য শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত হয়। এদেরকে ব্রংকিওল বলে। ব্রঙ্কাইয়ের গঠন শ্বাসনালির মতো।

৬. ফুসফুস : বক্ষগহ্বরের ভিতর দুটি ফুসফুস হৃৎপিণ্ডের দুই পাশে অবস্থিত। এটা স্পঞ্জের মতো নরম ও কোমল। ডান পাশের ফুসফুসটি বাম পাশের ফুসফুসের চেয়ে সামান্য বড়ো। ফুসফুস দুই ভাজবিশিষ্ট পুরা নামক একটি ঝিল্লি বা পর্দা দ্বারা আবৃত। দুই ভাঁজের মধ্যে এক প্রকার পিচ্ছিল পদার্থ থাকে। ফলে শ্বাসপ্রশ্বাস কাজে, ফুসফুস ও বক্ষগাত্রের সাথে কোনো ঘর্ষণ লাগে না। ব্রঙ্কাস প্রতিপাশে ফুসফুসে প্রবেশ করে অসংখ্য শাখা প্রশাখায় বিভক্ত হয়। এই সূক্ষ্ম ব্রংকিওলগুলো বায়ুথলি বা বায়ুকোষে প্রবেশ করে। প্রত্যেকটি বায়ুথলি পাতলা এ্যাপিথেলিয়াল কোষ দ্বারা গঠিত। এ কোষগুলো কৈশিক জালিকা দ্বারা পরিবেষ্টিত। কোষগুলোতে বায়ু প্রবেশ করলে এগুলো বেলুনের মতো ফুলে উঠে ও পরে আপনা আপনি কুঞ্চিত হয়ে যায়। বায়ুথলি ও কৈশিক জালিকা উভয়ের প্রাচীর এত পাতলা যে, সহজেই এগুলোর মধ্য দিয়ে বায়ু আদান-প্রদান করতে পারে।

৭. মধ্যচ্ছদা: যে মাংসপেশি বক্ষগহ্বর ও উদরগহ্বরকে পৃথক করে রেখেছে তাকে মধ্যচ্ছদা বলে। এটা দেখতে অনেকটা প্রসারিত ছাতার মতো। মধ্যচ্ছদা সংকুচিত হলে নিচের দিকে নামে। তখন বক্ষগহ্বরের আয়তন বাড়ে। আবার এটা যখন প্রসারিত হয় তখন উপরের দিকে ওঠে এবং বক্ষগহ্বর সংকুচিত হয়। মধ্যচ্ছদা সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে প্রশ্বাস ও নিঃশ্বাস কাজ নিয়ন্ত্রণ করে।

নিজেরা কর: চার্ট দেখে শ্বসনতন্ত্রের চিহ্নিত চিত্র অঙ্কন কর এবং ফুসফুসের কাজ বর্ণনা কর।

নতুন শব্দ: শ্বাসনালি, বায়ুথলি, স্বরযন্ত্র, ব্রংকিওল, ব্রঙ্কাস, ক্লোম শাখা ও অনুক্লোম শাখা।

Content added By
Promotion